Dinajpur Barta News - দিনাজপুর বার্তা : আমরা দিনাজপুর বার্তার পক্ষ থেকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম অহিংস আন্দোলনের নেতা তথা জাতির জনককে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে আমাদের এই পেজে দুই একটি কথা তুলে ধরছি।
অহিংসার প্রতীক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর সার্ধশত জন্মদিবস আজ ২রা অক্টোবর। সারা বিশ্ব জুড়ে আজ এই দিনটিতে আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস হিসাবে পালিত হয়। ১৮৬৯ সালের ২রা অক্টোবর গুজরাটের পোরবন্দর শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ভারতবর্ষের সাথে সারা বিশ্বে এই দিনটিকে গান্ধীজয়ন্তী হিসাবে পালন করা হয় ও সমগ্র ভারতবর্ষে এই দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
মহাত্মা গান্ধী ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম জাতীয় নেতা ও রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ব্রিটিশ স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তার এই আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অহিংস মতবাদ বা দর্শনের উপর এবং এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকাশক্তি যা পরবর্তীতে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে স্বাধীনতা এবং অধিকার পাওয়ার আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী মহাত্মা গান্ধীর জন্ম ২রা অক্টোবর। ভারত সরকার তাই এই দিনটিকে জাতির জনক হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ২০০৭ সালের ১৫ ই জুন জাতিসংঘের সাধারণ সভায় অক্টোবর কে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় জাতিসংঘের সকল সদস্য দেশ এই দিবস পালন সম্মতি জ্ঞাপন করে।
একজন ব্রিটিশ আইনজীবী হিসেবে ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে গান্ধী প্রথম তার শান্তিপূর্ণ নাগরিক আন্দোলনের মতাদর্শ গ্রহন করেন ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয় সম্প্রদায়ের নাগরিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যুক্ত হন, তারপর ভারতে ফিরে এসে কয়েক জন দুস্থ এবং দিনমজুরকে সাথে নিয়ে বৈষম্যমূলক কর আদায় ব্যবস্থা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে আসার পর মহাত্মা গান্ধী সমগ্র ভারতব্যাপী দারিদ্র দূরীকরণ, নারী স্বাধীনতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, বর্ণ বৈষম্য দূরীকরণ এবং জাতীয় অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয়ে প্রচার শুরু করেন, এসবগুলো তৎকালীন প্রধান লক্ষ্য।
মহাত্মা গান্ধীর সমস্ত পরিস্থিতিতেই অহিংস মতবাদ এবং সত্যের ব্যাপারে অটল থেকেছেন। তিনি কোন সময় সহিংস আন্দোলনকে গ্রহণ করেননি এবং তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তিনি বলেছেন সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে কোন দেশ বা জাতি গঠন করা সম্ভব নয় বা কোন দেশের সুস্থ পরিবেশ গড়ে উঠতে পারে না, তাই অহিংস আন্দোলনই হচ্ছে একমাত্র পথ, যে পথ দিয়ে একটি দেশ, একটি জাতি ও সমাজ সুস্থ ও সম্মানের সঙ্গে চলতে পারে।
তিনি সর্বদাই সাধারণ জীবন যাপন পালন করেছেন। তাঁর ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় চরখায় বোনা সুতি ধুতি এবং একটি শাল ব্যবহার করতেন। তিনি সর্বদায় সাধারণ নিরামিষ ভোজন করতেন । শেষ জীবনে ফলমূলই ছিল তার প্রধান খাদ্য। আত্মশুদ্ধি এবং প্রতিবাদের কারণে দীর্ঘ সময়ের জন্য তিনি উপবাস থাকতেন।
মহাত্মা গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে আসেন ১৯১৫ সালে এবং তিনি তার কয়েকজন অনুগামীকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আতিথ্য গ্রহণ করেন। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভায় বক্তৃতা দেন এবং সত্যাগ্রহের মাধ্যমে আন্দোলন করেন।
শান্তি ভঙ্গের অভিযোগ এনে ভারতের ব্রিটিশ সরকার তাঁকে গ্রেফতার করেন। জেলে হাজার হাজার লোক সমবেত হয় এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করে, এছাড়াও জনতা পুলিশ ফাঁড়ি ও আদালতে এসে গান্ধীজির মুক্তির দাবি করেন। ব্রিটিশ সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে গান্ধীর অস্ত্র ছিল অসহযোগ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ । ১৯২১ সালে ডিসেম্বর মাসে মহাত্মা গান্ধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নির্বাহীর দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। তিনি ভারতের স্বাধীনতার দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং ভারতীয় পন্য বর্জন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত বর্জন, সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা এবং ব্রিটিশ উপাধি বর্জনের ডাক দেন।
গান্ধীজি পুনরায় গ্রেপ্তার হন ১৯২৪ সালের ১০ই মার্চ এবং তার উপর ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও আইনভঙ্গের অভিযোগে তাকে ৬ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। তবে ১৯২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এপেন্ডিসাইটিস অপারেশনের জন্য তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
তারপর ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে গান্ধীর লবণ আন্দোলন শুরু করেন ১৯৩০ সালের ১২ই মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত এবং প্রায় ৪০০ মাইল পায়ে হেঁটে এলাহাবাদ থেকে ডান্ডি পর্যন্ত নেতৃত্বে ছিলেন।
তারপরে ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে সরকার সকল অসহযোগ আন্দোলনে বন্ধের বিনিময়ে সকল রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে রাজি হয়। এই সময় তিনি ভারতছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেন এবং দেশ স্বাধীনতার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন।
অতঃপর ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারতবর্ষের স্বাধীন হয়, কিন্তু ভারতবর্ষ দুটো ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ব্রিটিশরা জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ কে অন্যায় ভাবে বিভাজিত করে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে এদেশ থেকে চিরতরে বিদায় গ্রহণ করেন। জাতি-তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তানের জন্ম হলেও ভারতবর্ষ তা মেনে নেয়নি, এখানে গণতন্ত্রকে সামনে রেখে সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ গড়ে উঠুক মহাত্মা গান্ধী তা মেনে নেয়নি। তাই ভারতবর্ষে গণতন্ত্রকে সামনে রেখে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা পরিচালনা করার জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়। ১৯৪৮ সালের তেইশে জানুয়ারি জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী এক আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। তিনি দিল্লির বিরলাভবন প্রাঙ্গণে সান্ধ্যকালীন পথসভা করছিলেন, সেই সময় পুনের এক অধিবাসী নাথুরাম গডসে তাকে গুলি করে হত্যা করে। পরে জানা যায়, নাথুরাম গডসে ছিলেন হিন্দু মহাসভার সদস্য। তিনি গান্ধী মতবাদকে মেনে নিতে পারেননি। অবশেষে ধরা পড়ে যান এবং ভারতীয় আদালতের বিচারকের রায়ে তার ফাঁসির আদেশ হয় এবং ১৯৪৯ সালের ১৪ই নভেম্বর তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। মহাত্মা গান্ধীর প্রয়াণের ৬৫ বছর পর নরওয়ের নোবেল কমিটি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে, তাঁর মতো একজন মহান ব্যক্তিকে পুরস্কার দিতে না পেরে আমরা লজ্জিত। মহাত্মা গান্ধীর মতবাদ বা আদর্শ বিশ্বব্যাপি আজও সমাদৃত।
Some famous quotes from Mahatma Gandhi.
"You must be the change you wish to see in the world."
"First they ignore you, then they laugh at you, then they fight you, then you win."
'Live as if you were to die tomorrow; learn as if you were to live forever.'
'An eye for eye only ends up making the whole world blind.'
'Where there is love there is life.'
'The greatness of a nation can be judged by the way its animals are treated.'
'Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.'
'The best way to find yourself is to lose yourself in the service of others.'
'You must not lose faith in humanity. Humanity is an ocean; if a few drops of the ocean are dirty, the ocean does not become dirty.'
'A man is but the product of his thoughts. What he thinks, he becomes'
No comments:
Post a Comment